মো. আতিকুর রহমান ঃ
ঝালকাঠি বিসিক শিল্প নগরীর প্রথম উদ্যোক্তা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শাহ আলম সারেং। তাঁর মেধা ও শ্রম দিয়ে তিলে তিলে গড়া সারেং ফার্নিচার বিসিক শিল্প নগরীর প্রথম শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ঝালকাঠি বিসিক শিল্প নগরীতে আলো জ্বালালো এ প্রতিষ্ঠানটি। সারেং ফার্নিচারের মালিক আলহাজ্ব শাহ আলম জানান, ঝালকাঠিতেই একটি আধুনিক ফার্নিচার কোম্পানির ডিলারশীপের ব্যবসা করতেন। কোম্পানির অসন্তোষজনক আচরণের কারণে নিজেই উদ্যোক্তা হবার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী জনবল নিয়োগ করে শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় ফার্নিচার তৈরির কাজ শুরু করেন। ১৫ বছর ধরে ফার্নিচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তিনি। তাঁর পরিকল্পনার ফার্নিচারগুলোর গুণগত মান ভালো হওয়ায় জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বাসাবাড়ি, অফিসের আসবাবপত্র শুধু ঝালকাঠির ক্রেতারাই নন বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এখান থেকে কিনে নিয়ে যান। ফলে ব্যবসার পরিধি আরো প্রশস্ত করতে হয় শাহ আলম সারেংকে। ইতিমধ্যে ঝালকাঠি বিসিকের কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে বছর খানেক আগে ৯৯ বছরের চুক্তিতে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে ২৪ হাজার বর্গফুটের প্লট বরাদ্দ নেন। ২ কিস্তিতে ৩৩ লাখ টাকা প্রদান করে বাকি টাকা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০ কিস্তিতে প্রদানের চুক্তিনামায় অঙ্গীকার করেন। বিসিকে সারেং ফার্নিচারের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে গত ১৬ আগস্ট কারখানা চালু করেন। সারেং ফার্নিচার কোম্পানিতে বর্তমানে বিভিন্ন পদে ৮০জন লোক নিয়োজিত আছেন। ফার্নিচার জগতের সকল ধরনের পণ্য মানসম্মতভাবে এখানে উৎপাদন করা হয়। বরিশাল-খুলনাসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে এখন সারেং ফার্নিচারের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র আছে। শুধু ব্যবসাই নয়, ব্যবসার একটা অংশ মানবিক সাহায্যে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিয়ে থাকেন আত্মপ্রচার বিমুখ সারেং ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম। তাঁর এ ব্যবসা পরিচালনার কাজে সহায়তা করেন তার একমাত্র পুত্র বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে ডিগ্রিপ্রাপ্ত জোবায়ের আলম মুন। সারেং ফার্নিচারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম আরো জানান, শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে সরকার কর্তৃক সম্মাননা প্রদানের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার ছোবলে সে প্রোগ্রামও হয়নি, আর সম্মাননাও পাইনি। সারেং ফার্নিচার কোম্পানির পরিচালনা বিষয়ে তিনি জানান, কোম্পানিতে বর্তমানে বিভিন্ন পদে ৮০জন লোক নিয়োজিত আছেন। নিজ নিজ বাসায় নাস্তা করে সকাল ৮ টায় এসে কাজে যোগদান করতে হয়। এরপর কোম্পানির সৌজন্যে সকলকে সকাল ১১ টার দিকে আধা ঘণ্টার জন্য বিরতি দিয়ে নাস্তা করানো হয়। জোহর নামাজ ও দুপুরের খাবারের জন্য ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত বিরতি দেয়া হয়। ২০ টাকা টোকেন মানি (খুচরা খরচ) এর বিনিময়ে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। মোবাইলের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এলার্ম বাজিয়ে যথাসময়ের দায়িত্ব পালন করতে সচেতন করা হয়। কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, সারেং কোম্পানিতে কাজ করার ফলে আমাদের জীবন থেকে বেকারত্বের অভিশাপ দূর হয়েছে। এতো বড় একটি এরিয়ার মধ্যে শুধু আমাদের কোম্পানিই রয়েছে। আর কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। মনে হচ্ছে বিসিকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে সারেং ফার্নিচার কোম্পানি। উল্লেখ্য, ঝালকাঠি শিল্প নগরীর উন্নয়ন কাজ ২০১৪ সালে শুরু হয়ে ২০১৮ সালে সম্পন্ন হলে ২০ অক্টোবর তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও ১১.৮ একর জমির ৪টি প্লটে ২৪ হাজার বর্গফুটের বরাদ্দ হয়েছে। যা পারটেক্সের আসবাবপত্র তৈরির কোম্পানি সারেং ফার্নিচার ২৪ হাজার ফুটের একটি প্লট ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় বরাদ্দ নিয়েছে। বাকি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্লটের মূল্য অতিরিক্ত বেশি হওয়ায় আগ্রহ হারান ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। সারেং ফার্নিচার কোম্পানি ২৪ হাজার স্কয়ার ফুট জমি বরাদ্দ নিয়ে ঝালকাঠি বিসিকের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। কয়েকদিন পূর্বে বিসিকের নীতি নির্ধারণী সভায় ঝালকাঠিসহ কয়েক জেলার বিসিকের প্লটের মূল্য শতকরা ৪০ ভাগ কমানো হয়েছে। বিসিক সূত্রমতে, বরিশাল-ঝালকাঠি-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ঢাপড় এলাকায় ১১.৮ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরী। তবে প্লটভুক্ত জমির পরিমাণ ৮.২৬ একর। প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে সম্পন্ন হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এরপর প্লট বরাদ্দের জন্য আহŸান করে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলে মোট ৭৯ টি প্লটের মধ্যে আবেদন পড়েছিল মাত্র ১১ টি। প্লট বাছাই কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে ত্রæটিমুক্ত ঘোষণা করেন ৬টি আবেদন। যার মধ্য থেকে পারটেক্সের আসবাবপত্র তৈরির কোম্পানি সারেং ফার্নিচার ২৪ হাজার ফুটের একটি প্লট ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় বরাদ্দ নিয়েছে। বাকিরা অতিরিক্ত বরাদ্দ মূল্যের কারণে আর অগ্রসর হননি। এখন জমি বরাদ্দ মূল্য কমেছে, তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্দেশনা আসলেই প্রচার-প্রচারণা করলে উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ নিতে সাহস পাবেন। বিসিক উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাফাউল করীম জানান, শিল্প নগরীর জমি কম। তবে উন্নয়ন খরচ বেশি হওয়ায় প্লটের দামে তার প্রভাব পড়েছে। এ কারণে মূল্য বেশি হওয়ায় প্লট বরাদ্দের আবেদনে তেমন সাড়া পাইনি। সারেং ফার্নিচার কোম্পানি ২৪ হাজার ফুটের একটি প্লট ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ নিয়েছে। ২ কিস্তিতে ইতিমধ্যে ৩৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। বাকি টাকা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ১০ কিস্তিতে প্রদানের চুক্তিনামায় অঙ্গীকার করেন। প্লট বরাদ্দ না হওয়ার বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ও সিদ্ধান্ত জানতে বিসিক প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। প্লট বরাদ্দ কমিটির সভায় সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী প্লটের মূল্য কমাতে বিসিক চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। কয়েকদিন পূর্বে বিসিকের নীতি নির্ধারণী সভায় ঝালকাঠিসহ কয়েক জেলার বিসিকের প্লটের মূল্য শতকরা ৪০ ভাগ কমানো হয়েছে। এখন জমি বরাদ্দ মূল্য কমেছে, তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা এখনও আসেনি। নির্দেশনা আসলেই প্রচার-প্রচারণায় উদ্যোক্তারা যেন দ্রুত এসে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি জেনে নিয়ে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানান তিনি। পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দর চালু হলে জমে উঠবে এ শিল্পনগরী এমন দাবি করে প্লট বরাদ্দ শেষ করতে চান উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাফাউল করীম।
Leave a Reply